কাছের বা দূরের যা দেখা প্রযোজন, মনযোগে দিয়ে দেখুন। গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখুন। আধা - আধা, ভাসা- ভাসা নয়, অর্ধেক নয়, পুরোপুরি দেখার চেষ্টা করুন। চোখ- কান খোলা রেখে গভীর মনোযোগের সঙ্গে যা দেখা হয় ---- মনের মধ্যে সেটি দাগ কাটে, স্মৃতির পাতায় তার ছাপ হয় দৃঢ় এবং মস্তিষ্কে তথ্য হিসেবে লিপিবদ্ধ হয় দীর্ঘসময়ের জন্য। মনের গভীর মনোযোগ ও একাগ্রতা স্মরণশক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বুদ্ধি বিকাশের পথকে সহজতর করা যায় গভীর ও একান্ত নিমগ্নতার মাধ্যমে। আবার, সুন্দর পরিবেশ মনকে সজীব - সতেজ করে, মেধা- মনন- সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে। তবে, প্রতিনিয়ত যদি চাওয়া - পাওয়া, হতাশা - ব্যর্থতা, দুঃখ - বেদনা, রাগ- ক্ষোভ, হিংসা - বিদ্বেষ মনের মধ্যে ঘুরঘুর করতে থাকে তাহলে ব্রেইন বা মস্তিষ্ক নতুন তথ্য ও বিষয় সহজে ধারণ করতে পারে না। তখন, স্মরণশক্তি কমতে থাকে, প্রযোজনীয় বিষয়ও ভুলে যাই আমরা।
সাধারণত, আমরা বুকের বামদিকে আলতো করে হাত রেখে বলি, 'এই তো এখানে মন।' ভুল, সবই ভুল।
ঐখানে 'মন' নেই, ঐখানে বাইরে জামার বুকপকেট আর শরীরের ভেতরে আছে আমাদের হার্ট বা হৃৎপিণ্ড। তাহলে, মন কোথায়? মন আছে মনের জায়গায়। মন হচ্ছে ব্রেইন বা মস্তিষ্কের অংশ, সেখানেও কথা আছে, মস্তিষ্কের যে অংশ দেখা যায় তা কিন্তু মন নয়, মন দেখা যায় না। মস্তিষ্ককে একটি কম্পিউটারের সাথে তুলনা করলে 'মন' হচ্ছে ঐ কম্পিউটারের 'সফটওয়্যার' যা দৃশ্যমান নয় কিন্তু মহামূল্যবান।
মন মূলত মস্তিষ্কের মেমোরির সাথে যুক্ত, যা মানুষের চিন্তা - চেতনা - ভাবনা- আবেগ, মেধা - মননা ও বুদ্ধির সাথে সম্পৃক্ত।
মন নিয়ে আমরা যা যা বলি ওসব আমাদের ধারণা।
মনের নিজেস্ব একটা সাম্রাজ্য আছে। এই সাম্রাজ্যের বিশাল প্রাসাদ হচ্ছে আবেগ, ঐ প্রাসাদের প্রহরীর মতো থাকে মানুষের অসংখ্য স্মৃতি। এই স্মৃতি আমাদেরকে 'আমি ' হিসেবে তৈরি করে।
ভালোবাসা একধরনের ইতিবাচক আবেগ, যা অমূল্য। সে কারণে, ভলোবাসা থাকে 'আবেগ- প্রাসাদের' ভেতরে সুরক্ষিত একটা গোপন কুঠিরিতে। রাগ - বিরাগ - অনুরাগ ঐ কুঠিরের প্রহরী। 'ভালোবাসার চাবি' ছাড়া ঐ কুঠিরের দরজার তালা খোলা যায় না।
'রাগ- বিরাগ - অনুরাগকে' পরাজিত করে 'ভালোবাসার চাবি' দিয়ে ভালোবাসার গোপন কুঠিরির তালা খুলতে হয়। জোড় করে লাভ হয় না।
ভেতরের কাঁচা আবেগ ও বাইরের নানা উদ্দীপকের কারণে মনের সাম্রাজ্যে ঝড় ওঠে। আমরা অস্থির হই। প্রথমে ভালো না লাগা, দুঃখবোধ এবং তারপর বিষণ্ণতা দখল করে মনের প্রাসাদ।
তবে, সাধারণ বিষন্নতা একটি সাময়িক মানসিক অবস্থা। বিষণ্নতা বোধ করলেও ইতিবাচক কাজে মন দিন, আপনজনের সাথে সময় কাটান, প্রকৃতির কাছে যান, ধর্মীও এবং অন্যান্য ভালো বই পড়ুন। বিষন্নতা একটা সময় পরে কেটে যাবে। মেঘের আড়ালেই তো সূর্য হাসে!