Featured Post সব ব্লগ

প্রকৃতির বিছানা

জিবনের উপলব্ধি  |  ট্রাভেল  |  আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া

২০২২-১০-০৩ ০৪:৫০

প্রকৃতির বিছানা

ক' কছর আগের কথা। সারারাত বৃষ্টি । অবিরাম। বৃষ্টি ভেজা সকাল । ভোরের পবিত্রতা তখনও লেগে আছে শহরের গায়ে । আকাশে মেঘ । কখন আবার ঝুম ঝুম বৃষ্টি নামে । যদিও শরৎ , কিন্তু বর্ষা যাই যাই করে যাচ্ছে না । আমরা ফজরের পরেই বেরিয়ে পরলাম । ড্রাইভার শের আলি ভাই । আধ্যাত্মিক নগরী সিলেট সারারাতই জেগে থাকে । পানসী রেষ্টুরেন্টে নাস্তার বিরতি । কাক ডাকা ভোরেও রেষ্টুরেন্টটিতে অসখ্য খদ্দের । নাস্তা শেষে গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো । উদ্দেশ্য পান্তুমাই আর বিছানাকান্দিতে একবেলা কাটানো । কিছু দূর যাবার পর শুরু হলো ভাঙা রাস্তা । মনে হচ্ছে কিছু আগে গডজিলা এ রাস্তা দিয়ে হেঁটে গিয়েছে । তবে, রাস্তার দু’পাশের সবুজ প্রকৃতি অপরূপ । কোথাও সবুজ ধানের ক্ষেত , কোথাও সবুজ ঘাসের কার্পেট, কোথাও আবার জলের মধ্যে সারি সারি গাছ । আঁকাবাঁকা গ্রামীণ পথের সবুজের সমারোহ মনকেও সবুজ করে দেয় । " সবুজে সবুজ, গাছের সবুজ, ঘাসের সবুজ মিশে, অনন্ত সবুজ দেখিতে গিয়ে হারাই পথের দিশে --- ।"

হাদারপার পৌঁছে ট্রলারে উঠলাম । বিছানাকান্দি যাওয়ার আগে আমরা যাই পান্তুমাই । পিয়াইন নদী দিয়ে পান্তুমাই । নদীর নামটি বড়ই রোমান্টিক । ভারতের মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড় থেকে নেমে এসেছে যেন পাহাড়ি চঞ্চলা হরিণী । সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট । এর পশ্চিমের একটি ছবির মতো গ্রাম পান্তুমাই । একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড় । পাহাড়ের ওপর সাদা - কালো মেঘেরা আপন মনে খেলা করছে । পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পিয়াইন । মেঘ - পাহাড় - নদীর কী অপূর্ব বন্ধুত্ব । পিয়াইন নদীর মূল জলধারা ঐ পাহাড়ের ঝর্ণা থেকে সৃষ্টি । যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত পাহাড়ের বিরহ - বেদনা যেন অশ্রু হয়ে ঝরছে ।

মেঘালয়ের পাহাড়ি ঝর্ণার ভারতীয় নাম বপহিল । বাংলাদেশে ঝর্ণাটি পান্তুমাই নামে পরিচিত । এ ঝর্ণাটি পাহাড়ি ঢাল বেয়ে পাথরের মাঝ দিয়ে সজোরে প্রবাহিত হচ্ছে, সে কারণে একে পান্তুমাই জলপ্রপাতও বলা হয় । এটি যেহেতু ভারতের মধ্যে, তাই দূর থেকে দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় । পান্তুমাই গ্রামের স্থানীয় কয়েকজনের সাথে আমরা ছবি তুলি । এক ছেলের টিশার্ট তো একেবারে জনাব জাফর আলমের ( বর্তমানে SIBL এর সম্মানিত এমডি ) মতো । ওরা অল্প সময়েই আপন হয়ে যায় । কিন্তু বিছানাকান্দিতে যাবার আকর্ষণে আবার ট্রলারে উঠেপড়ি । ধীরে ধীরে পান্তুমাই দূরে সরতে থাকে । দুপাশের অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে যাই বিছানাকান্দির কাছে । নদীতে পানি বেশি না । তবে, স্রোত আছে । কোথাও কোথাও গ্রামের বৌ- ঝি বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে । কোথাও বা নারীরা ধোয়া - পাকলা করছে । ছোট ছেলে - মেয়েরা গরু নিয়ে দিব্যি নদী পার হচ্ছে । কেউবা আমাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছে । এসবের সাথে , মেঘে ঢাকা মেঘালয় পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চলেছি । যখন আমরা বিছানাকান্দিতে পৌঁছি, তখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে । আকাশ থেকে অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে । নিচে নানা রঙের ছোট বড় পাথরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ঠান্ডা পানি । সবাই নেমে পরলাম পানিতে । সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষেই হারিয়ে গেল। পরম প্রশান্তি । এজন্যই, বিছানাকান্দিকে বলা হয়, সিলেটের স্বর্গ । বিছানাকান্দি যেন প্রকৃতির কোলে জেগে ওঠা প্রকৃতির বিছানা । ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঠান্ডা পানির প্রবাল স্রোত থরে থরে সাজানো নানা রঙের বাহারী পাথরের ওপর দিয়ে আপন মনে বয়ে চলেছে । ঠিক যেন এক পাথুরে নদী । মহান স্রষ্টার এক অপূর্ব সৃষ্টি ।

প্রকৃতির তো রূপের শেষ নেই । কখনো সে ধরা দেয় মনমাতানো অরণ্য হয়ে, কখনো সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ হয়ে, কখনো বা আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় হয়ে, কখনো পাহাড়ের অশ্রু ঝর্ণা হয়ে, আবার কখনো পাথরের নদী হয়ে । সবই স্রষ্টার উপহার । এবার , কার কাছে আপনি যেতে চান, সেটা আপনার সিদ্ধান্ত ।