ক'বছর আগের কথা। সুনামগঞ্জে গিয়েছিলাম, বাগান দেখতে। শিমুল ফুলের বাগান। লালে লাল দুনিয়া। সুনামগজ্ঞের তাহেরপুরে এ বাগান। যেতে হয় অনেক হাওড়-বাওড় চিরে, যাদুকাটা নদী পার হয়ে। 'যাদুকাটা' নামের মধ্যে কি এক রহস্য আর যাদু লুকিয়ে আছে। তাই, নদীটি সবাইকে যেন হাতছানি দিয়ে কাছে টেনে নেয়।
কিছু পাকা, কিছু কাঁচা রাস্তা। কখনও বা বাঁশ ঝাড়ের মাঝ দিয়ে বাইকে যাওয়া। সে ভাবেই, যাওয়ার পর পাওয়া গেল অনেক সাধের শিমুল বাগান। কিন্তু বিধি বাম। ফুল ঝরে গেছে ক'দিন আগে। শুধু একটি গাছে কিছু ফুল। অন্যসব গাছ ফুল-পাতাহীন। বসন্তে লাল ফুল আর বর্ষায় সবুজ পাতায় অপরূপ হয়ে ওঠে এই শিমুল বাগান।
নানা ঋতুতে নানা রূপে সাজে এ বাগানের শিমুল গাছগুলো। বসন্তের আগমনে নিদ্রিত বৃক্ষ জেগে ওঠে। লাল পুষ্পে আচ্ছাদিত হয়। মনে হয়, মনের আনন্দে গাছ যেন হাসিতে মুখরিত। প্রকৃতির ভালোবাসা যেন গাছে গাছে ফুল হয়ে ফোটে। এ সময়ে গাছের আনন্দ বাধ ভাঙ্গে। সে যেন সকলকে আমন্ত্রণ জানায়। সে আমন্ত্রণে প্রথমেই সাড়া দেয় গাছের চিরকালের বন্ধু প্রজাপতি আর মৌমাছি। তারা দলে দলে ফুল দেখতে আসে। ফুলের সাথে খেলা করে।
বসন্তশেষে পুষ্প-পত্র ঝেড়ে ফেলে মৃত কংকাল। বর্ষার আগমনে আবার সবুজ পাতায় আচ্ছাদিত হয়ে জীবনের জয়গান গেয়ে ওঠে। নিদ্রার পরেই জাগরণ। এই জাগরণই জীবনের ধর্ম। সাময়িক পত্র-পুষ্প হারালেও গাছের কোনো হতাশা নেই। সে জানে দৃশ্যত মৃত তার শরীরের অনুতে লুকিয়ে আছে জীবনোচ্ছাস। তাই সব অবস্থায় গাছগুলো মাথা উঁচুকরে দাঁড়িয়ে থাকে। আমরা মানুষ কেন যেন সামান্য পরিবর্তনে ভেঙে পড়ি। হতাশ হই।
এই গাছদের কাজ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। দুঃসময়ে মনের ভেতরে আশা জাগিয়ে রাখতে হবে। সুসময়ে তা কাজে লাগাতে হবে। বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী। নদীর ওপারে ভারত। পাহাড়-নদী-ফুলের বাগান একসাথে, সত্যি অতুলনীয়।